ভূত কি সত্যিই আছে? ভূত তাড়ানোর সাইকোলজিক্যাল মন্ত্র!

PaGoaL
By -
0

ভূত কি সত্যিই আছে? ভূত তাড়ানোর সাইকোলজিক্যাল মন্ত্র!

ভূত কি সত্যিই আছে? ভূত তাড়ানোর সাইকোলজিক্যাল মন্ত্র!

প্রারম্ভিকতা

আপনি কি কখনো ভূত দেখেছেন?

উত্তর "হ্যা" হউক আর "না" হউক তবুও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশেষত গ্রামীণ সমাজে বেড়ে ওঠা সিংহভাগ মানুষেরা অদ্যবধি ভূতে চরমভাবে বিশ্বাসী - এমনকি শহুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষেরাও আধ্যাত্মিকতার আবেশে "ভূত" নামক অলৌকিকতায় বেশ বিশ্বাসী বটে!

ভূত কি?

যদিওবা আজ অবধি "ভূত দেখা" মানুষেরা কেউই স্পষ্টভাবে ভূতের শারীরিক গঠনের স্ক্রাচ আঁকতে পারেননি তথাপি ভূতের গাঠনিক গড়ন হয় আকাশচুম্বী লম্বা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বাঁটুল খর্বাকৃতি, চুলেভরা কালো চেহারা কিংবা মৃত ব্যক্তির ন্যায় শুকিয়ে যাওয়া সাদা ফ্যাকাশে মুখাবয়ব, রক্তিম লাল আগুনের ন্যায় চাহনি অথবা ঠিকরে বেড়িয়ে আসা মণিছাড়া সাদা চোখ ইত্যাদি ইত্যাদি....

এবার একটু ভেবে দেখুন তো এই সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ কিন্তু পূর্বেই আমাদের ব্রেইনের মেমরীতে অবচেতন বা অচেতন মনে গেঁথে'ই আছে বিভিন্ন ভৌতিক গল্প বা হরর মুভি অথবা নানা-নানী কিংবা দাদা-দাদীর রোমাঞ্চকর গালগল্পে - তাইতো আমরা যখন ভূত দেখি তখন ঐরূপ অবয়ব আমাদের সম্মুখে উদ্ভূত হয় মাত্র!

ভূত কিন্তু একটা পিপিলিকা অথবা সাদা পায়রার অবয়বে আপনার সামনে আবির্ভূত হবে না কেননা আপনার মস্তিষ্ক ঠিকই জানে যে "পায়রা" বা "পিপিলিকা" মোটেই ভয়ের বিষয় নয়, বরং ভূত হওয়ার জন্যই এমন আকৃতি আবশ্যক যেন যা আপনি ভয় পাবেন!

ভূত আর মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কি?

আচ্ছা "ভূত" আর "মানুষ" এর মাঝে ঠিক কিসের সম্পর্ক ভাবুন তো...

নিশ্চয়ই নির্দিষ্টভাবে বলতে হলে "ভয় দেখানো" এর ক্রিয়াশীল সম্পর্ক তাইনা?

তাহলে ভূতের উদয় কি শুধুই মানুষকে ভয় দেখানো নাকি মানুষ ভয় পেলেই কেবলমাত্র ভূতের আবির্ভাব ঘটে?!

বস্তুত আমরা যখন কোন কিছুতে ভয় পাই তখন ঠিক কেন ভয় পাচ্ছি এর গ্রহণযোগ্য একটি কারণ উপস্থাপনে আমাদের মস্তিষ্ক ভূত নামক এক অকারণ অস্তিত্বের অবতারণা করে কেননা মানব মস্তিষ্ক গণিতের নিয়মে লজিক্যাল এক জৈবিক কম্পিউটার যেন তাতে "কারণ বিনা কার্য হয় না" তাইতো একান্তই লৈকিক কি অলৌকিক কার্য হলেই তাতে "কারণ" তৈরী করা চাই-ই-চাই!

ভূত নিবাস কোথায়?

সাধারণত ভূতের অবস্থান হয় নিশিরাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে এমন নিশ্চুপ নির্লিপ্ত নীরব আবোহে রাতের আধারে বাশ-বাগান, জল দিঘি, ঘন জঙ্গল, শশ্মানঘাট, কবরস্থান, খোলা ছাদ প্রভৃতি স্থানে; এছাড়াও গভীর রাতে হুট করে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে ঐ ভূত আপনার বাড়ীর ঠিকানায় উপস্থিত হতে পারে বাথরুমে কিংবা মূর্তিমান হয়ে মশারির ওপাশে - এমনকি শক্তিমান ভূত হলে সেটা চেপে বসতে পারে আপনার বুকের ওপর দুই হাতে গলা চেপে!!!

আদতে এই সব পরিবেশ ও পরিস্থিতি পূর্ব হতেই আপনার ব্রেইনে বিপদজনক স্বরূপ "ভয়" মিথস্ক্রিয়ায় ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গোঁড়ামি মানসিকতার মুরুব্বীগণের উপদেশ স্বরূপ "ভরদুপুর বা রাতে শশ্মানঘাটে যেতে নেই", "রাতের বেলা একলা ছাদে যেতে নেই", "বাশ বাগানে খোলা চুলে পেত্নীর বাস" ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি আজও আমাদের অনেক মাতৃকুল শিশু ভাত খেয়ে না চাইলে কিংবা রাতে ঘুমাতে না চাইলে রকমারি নামের ভূতের ভয় দেখিয়ে কর্তব্য পালন করেন - অথচ এই অহেতুক ভয় যে শিশুর মানসিক বিকাশে এক ভয়ানক সুপ্ত প্রভাব বিস্তার করে তাতে বড্ড উদাসীন!

মূলত ভূতের নিবাস আমাদের ব্রেইন তথা মস্তিষ্কে যেখানে স্মৃতির লাইব্রেরিতে শৈশব হতেই রূপকথা থেকে সংসারপালার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সচেতন কি অবচেতন অথবা অচেতনভাবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছাসত্ত্বে ভূতের অস্তিত্বের বীজ গেঁথে দেওয়া হয় (গেঁথে যায়) যা কিনা উপযুক্ত পরিবেশে (যেমন গভীর রাতে একলা একাকী পথে হেটে যাবার সময় কিংবা শশ্মানঘাট প্রভৃতি স্থান পার হওয়ার সময়) মস্তিষ্কের রাসায়নিক সংকেতের অদ্ভুত রকমের (অদ্ভূত বটে তবে অযৌক্তিক নয়) মিথস্ক্রিয়ায় অঙ্কুরোদগম ঘটে; এই অঙ্কুরোদগম মাঝে মাঝে এমনি ভয়ংকর মহীরুহের আকার ধারণ করে যে তাতে মৃত্যু অবধি ঘটে যায় (যেমন ভয় পেয়ে তীব্র জ্বরে অসুস্থ হয়ে প্রলাপ বকতে বকতে অকাল প্রাণবিয়োগ)!

ভূত তাড়ানোর সাইকোলজিক্যাল মন্ত্র!

আপনি যতোই শারীরিক গঠনে শক্তিশালী হউন আর বীর সাহসী হউন আদতে ভূতের নিকট আপনি পরাস্থ হতে বাধ্য কেননা ভূতের ভৌতিক ক্রিয়া-কলাপ মস্তিষ্কের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রিক সিগন্যাল (ইম্পালস) আকারে ক্রিয়াশীল যেখানে আপনার পেশীশক্তি নিষ্প্রভ; তথাপি আপনার মানসিকতা অর্থাৎ মনোভাব যদি যুক্তিবাদী হয় তাহলে অনায়েসেই আপনি "ঘটনার পিছনের কারণ অনুসন্ধানে" ভয়'কে নিমিষেই জয় করতে পারবেন আর তখন উদ্ভূত ভূত অদ্ভূত হয়েই যেন বাতাসে মিশে যাবে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য থাকে যে যদি আপনার মনে নূন্যতম ভূতের বিশ্বাস থাকে কিংবা যুক্তির প্রতি সন্দিহান থাকেন তবে ভূত আপনার ওপরেও ভর করতে খুব সক্ষম কেননা ভূত'কে আপনি আপনার ঘাড়ে ভর করতে আপন ব্রেইনের জ্ঞান ও যুক্তি'কে অগ্রাহ্য তথা উপেক্ষাপূর্বক সুযোগ করে দিচ্ছেন মাত্র!

সুতরাং বলা চলে ভূত তাড়ানোর কার্যকরী তন্ত্র শিক্ষা হলো এলমাত্র "জ্ঞান এবং জ্ঞানের প্রায়োগিক স্বরূপ যুক্তি"!

এক গ্লাস মিষ্টি শরবত!

যদি আপনাকে সম্মোহিত করে এক গ্লাস লবণাক্ত পানিকে মিষ্টি শরবত বলে পান করতে বলা হয় তখন হয়তো সত্যিই আপনার নিকট সুমিষ্ট স্বাদ লাগবে - যদিওবা পানি এবং লবণ উভয়ই নিত্য স্বাদ বহন করে! আপনার জিহ্বার সেন্সর স্বরূপ সূক্ষ কোষগুলোও কিন্তু তীক্ষ্ণভাবে লবণাক্ততা অনুভব করে তথাপি মস্তিষ্কের কনশিয়াস মাইন্ড (সচেতন অংশ) এর ওপর সাব-কনশিয়াস মাইন্ড (অবচেতন অংশ) এর হিপ্নোটিক কমান্ড (সম্মোহক নির্দেশনায়) প্রযুক্ত হওয়ায় লবণাক্ত পানি আপনার নিকট মিষ্টি শরবতের আস্বাদন ঘটায় - যা খুবই সাময়িক সময়ের জন্য মাত্র!

ঠিক তেমনি ভূতে ধরা রোগীর ক্ষেত্রে তাকেও পানি পড়া কিংবা ঝাড়ফুঁক অথবা আধিভৌতিক ক্রিয়া-কলাপ যা করা হয় সেটাও একরূপ সম্মোহন মাত্র; সুতরাং সুস্থতা যদি হয় মানসিক বিষয় (সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট) তবে এক গ্লাস লবণাক্ত পানি যেমন হিপ্নোটিক কমান্ডে মেকি সুমিষ্ট শরবতে রূপান্তরিত হতে পারে তখন পানি পড়া বা ঝাড়ফুঁকে ভূত ভেগে যাওয়াও অসম্ভব অন্তত নয় (এটার ব্যাখ্যা সাইকোলজির সাধারণ টার্ম দিয়েই সম্ভব) - তবে এই ভূত আবারো বারংবার ফিরে আসে বা আসবে যতোক্ষন না অবধি আপন মস্তিষ্কে লজিক্যাল প্রোগ্রামিং ইনস্টল করছেন!!!

উপসংহার

আপনার মনের ভয় দূর করুন তাহলেই ভূত পালাবে - অবাস্তব ভূতের ভয়ে কাবু হয়ে থাকা নিতান্তপক্ষে অযৌক্তিক ও অসমীচীন!

আপনার সুন্দর জীবনের তরে নিরন্তর শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।

#Query_Keyword : Analysis,ভূত 

Tags:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)